জীবন ও ভাবনা: মানুষ নদীর মতো

এক ভীষণ শীতের সময়—আমি তখন মস্কো হাসপাতালে। সেটা ’৮০ বা ’৮১ সাল হবে। ইংরেজি তেমন জানি না। কিন্তু লাইব্রেরি থেকে লিও টলস্টয়ের রিসারেকশন নামে একটা বড় উপন্যাস পড়ে ফেলি, বাংলায় অনুবাদ হয়েছে পুনরুজ্জীবন। আপনারা অনেকেই হয়তো পড়েছেন। নাম তো অনেকেই জানেন। এটা টলস্টয়ের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস কি না জানি না। সবাই বলবে যুদ্ধ এবং শান্তি শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। আমার বিবেচনায়, টলস্টয়ের এই পুনরুজ্জীবন বা রিসারেকশন আমার জীবনে পঠিত বইয়ের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বই। ওই বইয়ে একটা অনুচ্ছেদ ছিল, যেখানে টলস্টয় বলেছেন, মানুষ হলো নদীর মতো। আমরা সাধারণত মানুষকে বিচার করি ভালো বা খারাপ। অর্থাৎ সরাসরি ‘না’ বা ‌‘হ্যাঁ’ বলে দিই। নদী যেমন বিশাল, গভীর, হয় সরু, নয়তো চওড়া থাকে, নদীর জল হয় কালো বা ঘন নীল অথবা খুব স্বচ্ছ, মানুষ তেমনই। মানুষ কখনো ভালো, কখনো খারাপ; কখনো উদার, কখনো অনুদার। তাঁর উপদেশ ছিল, এই নদীর মতো করেই মানুষকে দেখতে হবে। সব মানুষের মধ্যেই ভালো থাকতে পারে, খারাপও থাকতে পারে। আমাদের দায়িত্ব হলো মানুষের সেই ভালো দিকগুলোকে, ভালো বিষয়গুলোকে এবং আমাদের যা সফলতা এনে দেবে, যা জীবনকে নতুন করে গড়ে দিতে সাহায্য করবে—আমরা যখন মানুষকে বিবেচনায় নেব—সেভাবে যেন দেখি। অর্থাৎ মানুষ হলো নদীর মতো। নদী যেমন পানির রং বদলায়, রূপ বদলায়—কখনো স্বচ্ছ, কখনো অস্বচ্ছ, কখনো নীল, কখনো গভীর কালো, সে রকম। পুনরুজ্জীবন উপন্যাসের ওই কথাগুলো দারুণ ভালো লেগেছিল আমার। আর সেটাই হয়ে উঠেছিল জীবনের বড় একটা অনুধাবন। এই ভাবনা থেকেই লেখা ‘মানুষ হলো নদীর মতো’ কবিতা। আমি একসময় কবি হতে চেয়েছিলাম। এটিই আমার লেখা শেষ কবিতা। ছাপা হয়েছিল দৈনিক ‘সংবাদ’–এ—১৯৮১ সালে।

  • ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট সিলেট শুভানুধ্যায়ীদের আয়োজনে প্রদত্ত বক্তৃতা থেকে অংশবিশেষ। বক্তৃতাটির শ্রুতলিখন কিছু পরিমার্জনাসহ প্রকাশিত হয়েছিল আবুল হাসনাত সম্পাদিত শিল্প–সাহিত্যের মাসিক পত্রিকা ‘কালি ও কলম’–এ।